বাংলাদেশ | শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪ | ৬ বৈশাখ,১৪৩১

আন্তর্জাতিক

08-11-2017 10:10:56 AM

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)।

newsImg

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএর ৬৩তম সম্মেলনের শেষ দিনে সাধারণ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “কমনওয়েলথ দেশগুলোর পার্লামেন্ট সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার, যা গণহত্যার শামিল, নিন্দা জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।”

নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন এবং এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশের আলোকে তাদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

মিয়ানমার যাতে এই ব্যবস্থা নেয় সেজন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা আহ্বান জানালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসে মিয়ানমার সফর করে এলেও কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।  

 

মাস দুয়েকের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের শরণার্থী হওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার মধ্যে ঢাকায় সিপিএ সম্মেলনে যোগ দেন প্রায় অর্ধশত দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের ৫৬ জন স্পিকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ সদস্যসহ সাড়ে পাঁচশর মতো প্রতিনিধি।

সম্মেলনের শেষদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে সিপিএ মহাসচিব আকবর খান অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিবৃতিটি উপস্থাপন করেন। এ সময় চেয়ারপার্সন শিরীন শারিমন চৌধুরী বিষয়টি ফ্লোরে ছেড়ে দিলে  মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডাসহ সাত দেশের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন।

মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সুপারিশকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একটি বার্তা দিতে পারছি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছি। শিগগির মিয়ানমারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো যায় কি না দেখব।”

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ফজলে রাব্বি মিয়া সিপিএ’র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এখানে রেজুলেশন নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু এরপরও নানা পরিক্রমা পেরিয়ে বিবৃতি গ্রহণ করায় সবাইকে ধন্যবাদ।”

বারবাডোজের প্রতিনিধি সিপিএ এর মতো ফোরামে এ ধরনের প্রস্তাব নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না সে প্রসঙ্গ টানেন।দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি পুরো বিবৃতির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

এসময় উপস্থিত আরেকজন প্রতিনিধি অধিবেশনে চেয়ারপার্সনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিবৃতিটি এডপ্ট করা হয়েছে। আর এ নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার দরকার নেই। আমাদের সবার সম্মতি রয়েছে।”

 তার এই বক্তব্যের পর চেয়ারপার্সন সবার কাছে এ বিষয়ে মতামত চান। উপস্থিত সিপিএ প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার বিষয়ে সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ সূচক সম্মতি দেন।এরপরই সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবারের সিপিএ সম্মেলনের সমাপ্তি টানেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতনে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নাগরিকরা যে মানবেতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার দ্রুত সমাধান হতে হবে। সেখানে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চলছে, মানবাধিকারের চরম লংঘন হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

“বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজভূমে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

একইসঙ্গে মিয়ানমারে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সিপিএ’র পরবর্তী সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে তা উত্থাপন করতে বলা হয়েছে।সম্মেলন শেষে নবনির্বাচিত সিপিএ চেয়ারপারসন ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পিকার এ্যামেলিয়া মোনজোয়া লিফাঙ্কা ও সিপিএর সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খানকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদায়ী চেয়ারপারসন শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সফলভাবে সিপিএ সম্মেলন শেষ করতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “সিপিএ ও আইপিইউ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজন থেকে আমাদের অর্জন অনেক। এটা আমাদের গণতন্ত্র ও সংসদের অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা সচক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখার সুযোগ পেয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “সরাসরি ভোটে আমি এই সংস্থার চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছিলাম। গত তিন বছর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমার অর্জন অনেক। এখান থেকে অনেক কিছু দেখার ও শেখার সুযোগ হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অমূল্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছি। বাংলাদেশও এখান থেকে অনেক কিছু পেয়েছে।”

এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।এই বিবৃতি সিপিএভুক্ত সব পার্লামেন্ট সদস্য, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঠানোর জন্য সিপিএ মহাসচিবকে বলা হয়েছে।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- Shakila Sultana lima
এই খবরটি মোট ( 396 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends