বাংলাদেশ | মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪ | ২ বৈশাখ,১৪৩১

রাজধানী

30-11-2016 04:29:14 PM

ভয়ানক প্রতারনার ফাঁদে নায়িকা শাহনুর সহ অনেকেই; অবশেষে আটক হলো মুল হোতা

newsImg

রাজধানীর মিরপুরে দূর্ধর্ষ মানব পাচারকারী ও ভয়ানক প্রতারক চক্রের এক সক্রীয় সদস্যকে ৫৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করেছে শাহ্ আলী থানা পুলিশ। আটককৃত আঃ কাদের চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রায় ১০/১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভয়ংকর প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৬ শে নভেম্বর ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের এ/সি মোস্তফা মামুন ও শাহ্ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শাহ্ আলী থানা পুলিশের একটি আভিযানিক দল মিরপুরের ৩ নং সেকশনের ‘জে’ ব্লকের প্লট নং-জে/৪ উদয়ন রক্তকরবী হলের ৪/এন নং ফ্ল্যাটের ভাড়া বাসা থেকে কাদেরকে আটক করে। আটককৃত আ: কাদের চৌধুরী নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লাক গ্রামের ইদ্রিস আলমের ছেলে।

শাহ্ আলী থানা ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত দূর্ধর্ষ প্রতারক আ: কাদের ও তার স্ত্রী দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার মোটামুটি বিত্তবান মানুষকে পৃথিবীর বড় বড় ও উন্নত দেশগুলোতে পাঠিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান টাকা ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। বিশেষ করে বিশ্বের বিশেষ উন্নত দেশ কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জন প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে জাল ভিসাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আরিফ নামের একজন ভূক্তভোগী।

দেশীয় চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী বিখ্যাত চিত্রনায়িকা শাহনূরও রয়েছেন প্রতারিতদের দলে। এই চিত্রনায়িকা স্ব-শরীরে শাহ্ আলী থানায় হাজির হয়ে এই লোমহর্ষক মানব পাচারকারী ও প্রতারক চক্রের বর্ণনা দেন। দেশের বিখ্যাত নাটক “নন্দিনীর” পরিচালক মোঃ মনির হোসেনও এই প্রতারক চক্রের জালে ফেঁসে এক কোটি টাকা খুইয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে।

 

অভিযুক্ত আ: কাদের ও তার স্ত্রীই দূর্ধর্ষ এই চক্রটির মূল হোতা। তারা স্বামী স্ত্রী দুজনই পরিবার পরিজন নিয়ে কানাডায় বসবাস করেন এবং কানাডার সিটিজেনশীপের অধিকারী। এসকল ভূয়া, মিথ্যা কথা বলে ও বিভিন্ন কৌশলে এই দম্পতি তাদের অন্যান্য সহযোগিদের সহায়তায় দেশজুড়ে ভয়ংকর প্রতারণার জাল বিছিয়ে সম্প্রতি মানুষের বিপুল পরিমান টাকা আত্মাসৎ করে গা-ঢাকা দেয়।

এরপর ভূক্তভোগীদের তাগিদে শুরু হয় প্রতারকদের খোঁজাখুজি। এক পর্যায়ে প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি এই দম্পতির অবস্থান মিরপুরের উপরোল্লিখিত ঠিকানায় নির্ণয় করেন। দীর্ঘদিন নজরদারীতে রেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তিনি থানা পুলিশকে জানালে গতকাল পুলিশ তাকে আটক করে আইনের আওতায় আনে।

এ বিষয়ে আ: কাদের চৌধুরীকে আসামী করে বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইনের ১৯৭৩ সনের ১১(১) (ড) ধারা মোতাবেক মামলা লিপিবদ্ধ হলেও সচতুর ও সুকৌশলে এই ভয়ংকর প্রতারণা মামলার আসামী হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন কাদেরের প্রধান সহযোগী এই দ্বিতীয় স্ত্রী। শাহ্ আলী থানার মামলা নং-১০। তাং ২৬-১১-২০১৬। শাহ্ আলী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: ফিরোজ হোসেন মামলার বিষয়টি সময়ের কণ্ঠস্বরকে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন,  গত দু’দিনের রিমান্ড শেষে আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

খিলগাওয়ের এ্যাডঃ রফিকুল ইসলাম নামের একজন ভুক্তভোগী সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান তাদের কাছ থেকে প্রায় ২ (দুই) কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তাদের পুরো পরিবার আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। একই এলাকার এ্যাডঃ কামরুল বারী জানান তারও প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে এই ভয়ংকর চক্রটি। শুধু তারাই নন, অভিযুক্ত আটকের খবর শুনে শাহ আলী থানায় ৫০ জনেরও অধিক পাওনাদার তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি।

অভিযুক্ত আ: কাদেরের স্ত্রীকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘটনাটি সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি কৌশলে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।

এদিকে ভূক্তভোগীদের দাবী-তাদের নিকট থেকে আত্মসাৎকৃত প্রায় ১০/১২ কোটি টাকা এখনও কাদের চৌধুরীর এই স্ত্রীর নিকট গচ্ছিত রয়েছে। তারা তাদের নিকট থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া সহ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন। ভয়ানক এই চক্রটির সাথে জড়িত পলাতক প্রতারকদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করে নিরীহ মানুষের খোয়ানো অর্থগুলো ফেরত পাওয়াই এখন তাদের সময়ের দাবী।

এই বিষয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মোঃ ফিরোজ হোসেন জানান রিমান্ড শেষে সকল বিষয় পর্যালোচনা করে ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। এই চক্রটির সাথে জড়িত অন্যান্য সক্রীয় সদস্যদের খুঁজে বের করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- আই-নিউজ২৪.কম
এই খবরটি মোট ( 424 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends