বাংলাদেশ | বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪ | ৩ বৈশাখ,১৪৩১

স্বাস্থ্য কথা

21-08-2016 02:24:42 PM

মায়ের দুধবঞ্চিত শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি ১৪% বেশি

newsImg

সন্তানকে মায়ের বুকের দুধ না খাওয়ানোর কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ও অন্যান্য জটিলতায় প্রতিবছর বিশ্বে দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে এই ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৫৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এ কারণে উন্নয়নশীল দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) তা বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি যেসব শিশু মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ শিশুর চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। এসব শিশু ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। একটি স্বনির্ভর জাতি গঠনে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো বিকল্প নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে ‘মাতৃদুগ্ধ পানে উদ্বুদ্ধ ও নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞ বক্তারা। বিশ্ব  মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০১৬ পালনের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডি, ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল (এফএইচআই) ও কালের কণ্ঠ যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে নিউজ টোয়েন্টিফোর। অনুষ্ঠানে বক্তারা ২০১৩ সালে প্রণীত মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত আইনটির সঠিক প্রয়োগের ওপর জোর তাগিদ দেন। কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, যেকোনো সাফল্যের জন্য পলিটিক্যাল উইল দরকার। শিশুদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সরকারের পলিটিক্যাল উইল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন মাতৃদুগ্ধ পানের হার যে ৫৫ শতাংশের কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা আরো বেশি। কারণ বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের গবেষণায় তা ৬০ শতাংশের ওপরে দেখা গেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চার হাজারের বেশি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার রয়েছে, যেখানে মায়েরা তাঁদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের মাতৃদুগ্ধ পানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। এ ব্যাপারে আরো প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।’ ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা মায়ের বুকের দুধ পান করে বেড়ে উঠেছি। আজকের মায়েরা সন্তানের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। আর সন্তানরাও মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।’ তিনি বলেন, আজকের শিশুদের জন্য খেলার মাঠ নেই। তারা কোথাও খেলতে পারে না। এর সঙ্গে তারা মায়ের দুধ পায় না। এ কারণে একটি শিশু পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। বৈঠকে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার ছিল ৪৬ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশে। তবে সময়ের তুলনায় এই হার ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়েদের কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তাহমিদ আহমেদ বলেন, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে বুকের দুধ খাওয়ানো ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা এমডিজি থেকে এসডিজিতে উন্নীত হয়েছি। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের প্রত্যেক মা তাঁর সন্তানকে জন্মের পর ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসার কাজ চলছে। এখানে সরকার নেতৃত্ব দেবে আর আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ  ব্যাপারে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের সচেতন ও কাউন্সেলিং করব।’ ইউএসএআইডির পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. ইফতেখার রশিদ বলেন, ‘আমাদের সুবিধা হলো একটি জাতীয় পুষ্টিনীতি আছে, যেখানে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বিষয়ে শক্তভাবে বলা আছে। পাশাপাশি আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশনও তৈরি করা হচ্ছে। এতে আগামী ১০ বছর কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। পুষ্টিনীতি ও প্ল্যান অব অ্যাকশনের সমন্বয়ে আমাদের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।’ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘আমাদের দেশের গ্রামের নারীরা শিশুদের সব সময় বুকের দুধ খাওয়ান। তবে সবচেয়ে বড় সমসা শহরের উচ্চবিত্তদের মধ্যে। সেখানে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার খুবই কম। আগে তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে।’ সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এমসিএইচআইপির চিফ অব পার্টি জবি জর্জ বলেন, ব্রেস্ট ফিডিং শুধু শিশুর জন্য নয়, মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মা ও শিশুকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। সৌভাগ্যের বিষয় যে ব্রেস্ট ফিডিং এশিয়ার সংস্কৃতির একটি অংশ, যা এ অঞ্চলের শিশুদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশনের পরিচালক ড. এ বি এম মোজহারুল ইসলাম, ইউনিসেফের ড. মহসিন আলী, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এস কে রায়, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ব্র্যাকের এইচএনপিপির পরিচালক ড. কাউসার আফসানা, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, এমআই বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, সোশ্যাল মার্কেটিং কম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সহসভাপতি ড. নুরুল ইসলাম হাসীব প্রমুখ। বৈঠকে সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএসএইড বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ট্রয় বেকম্যান।

খবরটি সংগ্রহ করেনঃ- আইনিউজ২৪.কম
এই খবরটি মোট ( 555 ) বার পড়া হয়েছে।
add

Share This With Your Friends